Sun Sun Sun Sun Sun
English

স্ত্রীকে উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত করতে স্বামীর উৎসর্গ-অবদান এবং

সেই পৃষ্ঠপোষক স্বামীর প্রতি ক্ষমতাবান স্ত্রীর নিষ্ঠুর প্রতিদান

|| ড. এম হেলাল ||
শিক্ষা প্রত্যেক মানুষের মৌলিক অধিকার। নারীর ক্ষেত্রেও তা কোনো অংশে কম নয়। কিন্তু আমাদের সমাজ-ব্যবস্থায় বিবাহের পর মেয়েদের পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার বিষয়টি অধিকাংশ ক্ষেত্রে নির্ভর করে স্বামীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর। স্বামীর ইচ্ছা-অনিচ্ছার এ চিন্তাধারায় পজিটিভ-নেগেটিভ দুই ধরনের বিষয়ই কাজ করে। যে স্বামীর চিন্তাধারায় নারী-শিক্ষা সম্পর্কে পজিটিভ এটিচিউড থাকে, তার স্ত্রী বিয়ের পরও পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সৌভাগ্য অর্জন করে; আর যে স্বামীর চিন্তাভাবনায় নেগেটিভিটি থাকে, তার স্ত্রী বিয়ের পর শিক্ষার সুযোগ পায় না।

যে স্ত্রী পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার সুযোগ পায়, তার মনে রাখা উচিত- এ পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিটি পর্বে স্বামীর থাকে বিশাল সেক্রিফাইস। উচ্চশিক্ষিত হওয়া, বড় বড় ডিগ্রি অর্জন করা -এগুলো শুধু স্ত্রীর নিজের একক অবদান নয়; এর নেপথ্য শক্তি হিসেবে স্বামীর সুযোগ-ব্যয় (Opportunity Cost) সহ নানা ত্যাগ-তিতিক্ষা বিরাট ভূমিকা রাখে।

তাইতো নারী-আন্দোলনের অগ্রদূত বেগম রোকেয়া নারী-শিক্ষার প্রতি পুরুষদের সচেতন করার পাশাপাশি শিক্ষিত মেয়েদেরকেও হুঁশিয়ার করে বলে গিয়েছেন- শিক্ষা অর্জনের পর ডিগ্রি, মর্যাদা ও বিত্তবৈভবে নিজকে আপনার স্বামীর চেয়ে শ্রেষ্ঠ মনে করবেন না। বিবাহিত জীবনে একজন আরেকজনের অংশীদার। আপনার যেকোনো সাফল্যে স্বামীর যেকোনো ভূমিকা অকপটে স্বীকার করতে থাকুন। তা নাহলে আপনার অধিক সাফল্যের পথ রুদ্ধ হতে পারে।

উচ্চশিক্ষিতা স্ত্রীঃ কোনো স্বামীর জন্যে আশীর্বাদ,

আবার কোনো স্বামীর জন্যে ভয়ঙ্কর অভিশাপ!

আমাদের সকলের দাম্পত্য জীবনে বেগম রোকেয়ার উপরোক্ত হুঁশিয়ারীর গুরুত্ব অনুধাবনস্বরূপ কোনো নারীরই উচিত নয় যে, স্বামীর উৎসর্গ-অবদানকে কখনো অবজ্ঞা-অবহেলা করা। কারণ উচ্চশিক্ষিত স্ত্রীর পেছনে স্বামীর উৎসর্গ-অবদান কোনো কিছুর বিনিময়েই পূরণ করা সম্ভব নয়। তবে স্বামীর অবদানকে সর্বদা স্বীকার করা, স্বামীর অনুগত থাকা, আজীবন স্থায়ীভাবে স্বামীর পাশে থাকা, শক্ত হাতে সন্তান-সংসারের হাল ধরে স্বামী ও পরিবারকে সফল করার মাধ্যমে নিজের শিক্ষার প্রতি স্বামীর উৎসর্গ-অবদান পূরণ-প্রতিদানের প্রয়াস নিতে পারে সচেতন ও বোদ্ধা স্ত্রী।

যেকোনো শিক্ষিতা স্ত্রী প্রোজ্জ্বল পরিবারের জন্য অত্যাবশ্যকীয় আশীর্বাদস্বরূপ, যদি সেই স্ত্রী তার ব্যক্তিজীবনে সৎ চরিত্রের হন এবং তার পরিবারের মঙ্গলে তিনি যথেষ্ট ত্যাগ-তিতিক্ষা ও নীতিনিষ্ঠায় উৎসর্গীকৃত থাকেন। তাই সৎ ও মহৎ নারীদের ক্ষেত্রে শিক্ষা একদিকে যেমনি সমাজ প্রগতির জন্য অতীব জরুরি ও অত্যাবশ্যকীয়, তেমনি আবার কিছু অসৎ ও চরিত্রহীন নারীর ক্ষেত্রে এরূপ উচ্চশিক্ষা অত্যন্ত ভয়ঙ্কর-বিপর্যয়ের প্রধানতম কারণও হয়ে দাঁড়ায়।

অর্থাৎ ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ চরিত্রহীনা এরূপ শিক্ষিতা নারীই কিন্তু মাঝনদীতে আচমকা ডুবিয়ে দিতে পারে পুরো পরিবার; অনিশ্চয়তার অন্ধগহ্বরে নিক্ষিপ্ত করে দিতে পারে সন্তানদের জীবন, ধ্বংস করে দিতে পারে স্বামীর পুরো জীবনের স-ক-ল পরিকল্পনা; অর্থাৎ অতীত-বর্তমান ও ভবিষ্যৎ জীবনের সবকিছু। ভেঙ্গে চুরমার করে দিতে পারে সমাজের আশা-ভরসা এবং ভবিষ্যৎ উন্নয়ন-অগ্রগতির দূতাবাস হিসেবে গড়ে ওঠা সকল নির্ভরতা। পারস্পরিক সম্পর্ক ছেদ করে দিয়ে হতাশার গহ্বরে নিমজ্জিত করে দিতে পারে ঐ ভাঙা পরিবার সংশ্লিষ্ট স্বামী-স্ত্রীর দু’পক্ষের আত্মীয় ও পরিবার-পরিজনদের সবাইকে; তথা শত-সহস্র মানুষকে।

অর্থাৎ অসৎ চরিত্রের একজন শিক্ষিতা স্ত্রী তার শিক্ষা ও জ্ঞানের অপব্যবহারে এবং অসৎ কৌশল প্রয়োগে অপূরণীয় ক্ষতি করে দিতে পারে সমাজ, দেশ ও জাতির। তার অযৌক্তিক উন্মাদনা, অহংকার ও ক্ষমতার অপব্যবহারে পড়ে ভাঙা পরিবার আর ভাঙা জীবন নিয়ে হতাশার কাফন জড়িয়ে পৃথিবী থেকে চলে যায় কত পুরুষ, কত সন্তান -তার হিসাব কি রাখে কোনো সমাজ, রাষ্ট্র কিংবা সরকার? এরূপ দোর্দন্ড প্রতাপে পরিবার ভেঙ্গে ফেলতে সক্ষম-সফল হয় উচ্চশিক্ষার অহংকারে ক্ষমতার মসনদে বসা কোনো কোনো অসৎ নারী। তবে এরূপ ক্ষেত্রে ততটা সফল হয় না, এমনকি নিশ্চিত-নির্ভর-সাহস পায় না অশিক্ষিত কিংবা কম শিক্ষিত নারীরা। এ গ্রুপের নারীরা পরিবার ভাঙলেও তা অতটা ভয়ঙ্কর-ভয়াবহ হয় না। আবার কিছু ক্ষেত্রে পরিবার ভাঙলেও প্রতিবেশী ও আত্মীয়দের হস্তক্ষেপে সে ভাঙন জোড়াও লেগে যায়। কিন্তু উচ্চশিক্ষিত ক্ষমতাবান স্ত্রী কর্তৃক ভাঙা পরিবার আর কখনো আলোর মুখ দেখার সুযোগ পায় না এবং অর্থবিত্ত ও ক্ষমতার বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখিয়ে কুমৎলব-কুবুদ্ধি-কুটবুদ্ধি দিয়ে সে পরাজিত করে দেয় তার আত্মীয়-পরিজন-প্রতিবেশী, এমনকি তার নিজের মা-বাবা ও সন্তানদের সকল প্রচেষ্টা-প্রয়াসকেও। ফলে মানবিক শিক্ষাহীন এরূপ অসৎ চরিত্রের ও ব্যক্তিস্বার্থে অন্ধ শিক্ষিত কতিপয় নারী তার নিজ একান্ত আবেগী স্বার্থ চরিতার্থে পরোয়া করে না কোনো আইন-নীতি-সমাজ কিংবা রাষ্ট্রকেও।

বিশ্বসেরা ধনী বিল গেটস এর

আজীবন কৃতজ্ঞতা সংক্রান্ত বিষয়ে অনুকরণীয় গল্প

বিয়ের পর উচ্চশিক্ষা ও ক্যারিয়ার অর্জনে স্বামীর উৎসর্গ-অবদানকে কীরূপ কৃতজ্ঞমনে স্বীকৃতি দিতে হয়, তার উদাহরণে বিল গেটসের কৃতজ্ঞতার এক অনুকরণীয় গল্প বলছি।

বিশ্বের সবচেয়ে ধনী বিল গেটসকে একজন জিজ্ঞাসা করেছিলেন, পৃথিবীতে আপনার চেয়ে ধনী আর কেউ আছে কি? বিল গেটস জবাব দিয়েছিলেন- হঁ্যা, এমন একজন আছেন যিনি আমার চেয়েও ধনী। আমি যখন বিখ্যাত ছিলাম না, সেই সময়ে একবার নিউইয়র্ক বিমানবন্দরে একটি সংবাদপত্র কিনতে চেয়েছিলাম, কিন্তু দেখেছি আমার কাছে যথেষ্ট টাকা নেই। তাই সংবাদপত্রটি হাতে নিয়ে আবার বিক্রেতার কাছে ফিরিয়ে দেই। বিক্রেতা বললেন, আমি আপনাকে বিনামূল্যে দিচ্ছি। তার আগ্রহে নিতেই হলো।

দু’মাস পরে একই বিমানবন্দরে আবার অবতরণ করেছি এবং কাকতালীয়ভাবে আবারও সেই পত্রিকা বিক্রেতার সঙ্গে দেখা। তিনি আমাকে এবারও পত্রিকা অফার করলেন। আমি অপারগতা প্রকাশ করে বলেছিলাম- আমি এটি নিতে পারি না, এখনও আমার অর্থে পরিবর্তন আসেনি। তিনি বললেন- আপনি এটি নিন, আমার লভ্যাংশ থেকে আপনাকে দিচ্ছি, আমার ক্ষতি হবে না। তার পীড়াপীড়িতে পত্রিকাটি নিলাম।

ঐ ঘটনার ১৯ বছর পরে আমি বিখ্যাত হয়ে উঠি। হঠাৎ একদিন মনে পড়ে গেল সেই পত্রিকা বিক্রেতার কথা। আমি তাকে খুঁজতে শুরু করলাম এবং দেড় মাস অনুসন্ধানের পরে তাকে পেলাম। তাকে জিজ্ঞাসা করলাম, আপনি কি আমাকে চেনেন? তিনি বলেছিলেন- হঁ্যা, আপনি বিল গেটস।

তাকে আবার জিজ্ঞাসা করলাম- আপনার কি মনে আছে, একবার আমাকে বিনামূল্যে একটি পত্রিকা দিয়েছিলেন? বললেন- হঁ্যা, মনে আছে; আপনাকে দু’বার দিয়েছি। আমি বললাম, আপনি যে আমাকে বিনামূল্যে পত্রিকা দিয়েছিলেন, তা আমি ফিরিয়ে দিতে চাই। আপনি নিজের জন্য যা চান বলুন, আমি এটি পূরণ করব।

বিক্রেতা বললেন- স্যার, আপনি এমন কিছু দিতে পারবেন না, যা আমার সাহায্যের সমান হবে। আমি জিজ্ঞাসা করলাম, কেন? তিনি উত্তর দিলেন, আমি আপনাকে সংবাদপত্র দিয়েছিলাম আমার দরিদ্র অবস্থানে থেকে এবং আপনারও দরিদ্র অবস্থায়। আর এখন আপনি বিশ্বের সবচেয়ে ধনীর অবস্থানে থেকে আমাকে সাহায্য করার চেষ্টা করছেন। আপনার সাহায্য কীভাবে আমার সাহায্যের সমান হবে? বিশ্বের সেরা ধনী হয়েও আমাকে তার কাছে চিরদিন যে ঋণী হয়ে থাকতে হবে এবং এরূপ দামী মনের দান যে কিছুতেই পূরণীয় নয়, তা সেদিন আমি বুঝতে পেরেছি। কারণ- ঐ সময়ে এসে আমাকে তার সাহায্যের দান কোনো প্রতিদানেই পরিশোধযোগ্য নয়, তাকে অবনতচিত্তে কৃতজ্ঞতার সাথে স্মরণ করা ছাড়া। তাই আমি তার কাছে ঋণীই থেকে গেলাম এবং তিনি প্রকৃতই আমার চেয়েও অনেক বেশি ধনী।

বিল গেটসের মতো আমাদের আলোচ্য ক্ষেত্রেও স্বামীর অবদানে উচ্চশিক্ষিত ও প্রতিষ্ঠিত নারীগণ যদি তাঁদের স্বামীর নিকট একইরূপভাবে অবনতচিত্তে কৃতজ্ঞ থাকে, তাহলে সেই স্বামীদের অনুকরণে পরবর্তী প্রজন্ম-পুরুষরাও স্ত্রীদেরকে উচ্চশিক্ষায় ও প্রতিষ্ঠায় সহযোগিতাদানে উৎসাহিত এবং বদ্ধপরিকর থাকবেন।

আমার দেখায় নারীদের দু’রূপ

মহীয়সী বনাম সর্বনাশী

যেসব পুরুষ ব্যাচেলর লাইফেই নারীদের ভেতরের এরূপ দু’মনের দু’গ্রুপের রকম সম্পর্কে সম্যক জ্ঞান ও উপলব্ধি পেয়ে যান, তারা মহীয়সী বেগম রোকেয়ার মতো আদর্শে উজ্জীবনের কারণে নারী-শিক্ষার বুলি আওড়াতে এবং কলম চালাতে উচ্চকিত থাকেন ঠিকই; কিন্তু নিজ স্ত্রীকে হয় মধ্যম শিক্ষিতা চান, কিংবা বিয়ের পরে আর পড়াতে চান না কিংবা চাকরি-বাকরিতে বাইরের জগতে অতটা পরিচিত করান না কিংবা ক্ষমতার অহংকারে বাধা-বিপত্তি শর্ত-নিষেধাজ্ঞার জাল বুনে রশিটা তার মুঠোয় রেখে দেন।

আমার ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে এমন কিছু স্কলার ব্যক্তিত্ব ও নেতা পেয়েছি, যাঁরা তাঁদের স্ত্রীকে হয় উচ্চশিক্ষার সুযোগ দেননি কিংবা অধ্যয়ন শেষে কোনো কর্ম-পেশায় যেতে দেননি কিংবা যেকোনো কায়দায় শিক্ষিত স্ত্রীর অহংকার ও ক্ষমতার স্পর্ধাকে নিজ নিয়ন্ত্রণে রেখে দিয়েছেন।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার নিজ বিভাগ একাউন্টিংয়েরই বড় ভাই, যিনি আমার একই হলের (ঐতিহ্যবাহী সলিমুল্লাহ মুসলিম হল) সমসাময়িক আবাসিক ছাত্র ও হল-সংসদের ভিপি ছিলেন; পরবর্তীতে এবং বর্তমানেও বহু প্রতিষ্ঠানের প্রেসিডেন্ট-চেয়ারম্যান ইত্যাকার পদে গৌরবোজ্জ্বলভাবে অধিষ্ঠিত। তাঁর স্ত্রীও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কলার চৌকস ছাত্রী হওয়া সত্ত্বেও ঐ স্ত্রীকে ঘর-সংসার ও সন্তান পালন ছাড়া বাইরের অন্য কোনো পেশায় যেতে দেননি। প্রিয় ভাবীর মুখে স্বামীর বিরুদ্ধে এ অনুযোগ আমি ও আমার স্ত্রীসহ অনেকেই অনেকভাবে শুনেছি।

আমাদের সবার প্রিয় এ ভাবী সর্বদাই এ ভাইয়ের কাপড় ইস্ত্রি করে ও জুতা মুছে দিয়ে স্বামী-ভক্তির ও পরিবারের প্রতি অনুগত ও ভালোবাসার দৃষ্টান্ত স্থাপন করে অন্য শিক্ষিত নারীদের শুধিয়ে গেছেন- আমার শিক্ষা, আমার যে অর্জন; তা আমার পরিবার-দীক্ষায় তথা সন্তান-সেবা ও স্বামী-ভক্তিতেও প্রস্ফুটিত করে তুলবার কারুকাজ রয়েছে। যে শিক্ষা সন্তানের লালনে নিবেদিত হয় না, যে শিক্ষা স্বামীর প্রতি ভালোবাসার আনুগত্য আনে না -সে শিক্ষা, সে জ্ঞান, সে শক্তি, সে ক্ষমতা অর্থহীন। যে শিক্ষা নারীকে অহংকারী ও বেপরোয়া করে তোলে, সে শিক্ষার পরিণতি অত্যন্ত ভয়াবহ মারাত্মক; আমি সেই শিক্ষার বিরুদ্ধে।

উপরোক্ত ঘনিষ্ঠ ভাবী ছাড়াও আমার বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাসমেট, হলের রুমমেট বেশ ক’বন্ধুকে এখনো দেখছি- তারা নিজে সরকারের সচিব, ব্যাংকের এমডি, পুলিশের অতিঃ আইজি, বিচারপতি এবং এরূপ অনুরূপ অনেক বড় বড় কিছু অনেকেই। কিন্তু তাদের অনেকের স্ত্রীই উচ্চশিক্ষিত হলেও সংসারের বাইরে তেমন কিছু করছেন না। সন্তানকে বড় মান-হুঁশ করা এবং স্বামীকে বড় কাজে, বড় দায়িত্বে, দেশ ও মানুষের সেবার ক্ষেত্রে প্রেরণা যুগিয়েই স্বামী-সাফল্যে তারা আত্মতুষ্ট।

তবে এর বাইরেও ক’জন বন্ধু ও সতীর্থকে দেখেছি- তারা বিয়ের পর বউকে ভালোবেসে উচ্চশিক্ষিত করে দামী পেশায় ও পদে স্থলাভিষিক্ত করেছেন, কিংবা তাদের নিজ প্রতিষ্ঠানের চেয়ারম্যান বানিয়েছেন। কিন্তু বিধিবাম, সময়ান্তরে এ ক’জন বধুই তাদের স্বামীর ভালোবাসা আর উৎগর্সের প্রতিদান দিয়েছেন হয় স্বামীকে পদ ও প্রতিষ্ঠান থেকে সরিয়ে দিয়ে, কিংবা স্বামীকে আকস্মিক ডিভোর্স দিয়ে।

এগুলো কিন্তু হাতেগোনা ক’টি উদাহরণ। এর বাইরেও অনেক সুউন্নত ও মহৎ হৃদয়ের সুউচ্চশিক্ষিত নারী আমার জানাশোনায় আছেন; তাঁরা নিজেরা স্বামীকে নানাভাবে অনুপ্রাণিত, শাণিত, আন্দোলিত করে চলেছেন; স্বামী-স্ত্রী দু’জনে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে সমাজের ও জাতির সুউচ্চ স্তরে অবস্থান করছেন। এঁদের কথা লেখার ক্ষেত্রে মানা থাকতে পারে, তাই নাম উল্লেখ না করেই বলছি।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনে আমার সিনিয়র খালা থাকতেন শামসুন্নাহার হলে, আর খালু থাকতেন ঐ সময়েই সূর্যসেন হলে। সর্বদাই Introvert খালাকে আমি স্কুল-জীবন থেকেই প্রত্যক্ষ করে আসছি। অপূর্ব সুন্দরী ও নিরহংকারী খালার সাথে ততোধিক চৌকস-প্রতিভাদীপ্ত খালুজানের বিশ্ববিদ্যালয় অঙ্গনে পরিচয়ের সূত্র ধরে পরবর্তীতে তাদের বিয়ে হয়। প্রচন্ড শান্তিপ্রিয় ও তীক্ষ- দূরদর্শীতায় খালুকে সার্বক্ষণিক সাহচর্য-অনুপ্রেরণা ও অমায়িক ভালোবাসা দিয়ে ছোট্ট একটি ট্রাভেল এজেন্সি থেকে শুরু করে আজ তারা দু’জনে এ দেশ ও জাতিতে বিশাল অবদান সৃষ্টিকারী শীর্ষস্থানীয় বহু বড় বড় প্রতিষ্ঠান গড়ে তুলেছেন।

মাদার অর্গানাইজেশন তথা সেন্ট্রাল প্রতিষ্ঠানের এমডি হিসেবে সবকিছু চালান খালু। আর সর্বোতভাবে সুপরামর্শ, প্রেরণা, ভালোবাসা, সাহস-শক্তি দিয়ে খালুর অতীব সন্নিকট-বন্ধু ও সহযোগী হয়ে খালা রয়েছেন গ্রুপের চেয়ারম্যান হিসেবে। ব্যবসা-বাণিজ্য, শিক্ষা, পর্যটন, হোটেল ও নির্মাণ শিল্পে বিশাল অবদানের মাধ্যমে দেশ ও জাতির উন্নয়নে নিবেদিতপ্রাণ সফল ও স্বপ্নীল সুসম্পর্কের অমিয় বন্ধনের অনুকরণীয় এই দম্পতিকে এ লেখার মাধ্যমেও জানাচ্ছি আমার অতল শ্রদ্ধা।

এরূপ সফল পরিবার ও দম্পতি কিন্তু আমাদের সবার আশপাশে আরো অনেক আছে। কিন্তু দুঃখজনক হচ্ছে যে, উক্ত মহীয়সী খালার বিপরীত চরিত্রের সংখ্যাও কম নয়। খালার ঐ একই বিশ্ববিদ্যালয়ের এরূপ নারী-চরিত্রও আমার জানা রয়েছে, যে কোনো বোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয়ের পরীক্ষায় কখনো সেকেন্ড হয়নাই; সর্বত্রই ফাস্টর্ক্লাসের দাবিদার। কিন্তু নিজ সংসার ও পরিবারে সাফল্য কিংবা স্বামীর সাথে দাম্পত্য রক্ষা কিংবা ৩ সন্তানের উন্নতিতে অবদান রাখাতো দূরের কথা; বরং কিশোরী বয়সে চরিত্র হারানোর হীনমন্যতায় আজ পরিণত বয়সে উচ্চশিক্ষার উচ্চকিত অহংকারে এবং ক্ষমতার প্রচন্ড অপব্যবহারের সাথে উচ্ছৃঙ্খল দোর্দন্ড প্রতাপে ভেঙ্গে গুড়িয়ে ছারখার করে দিয়েছে ¯্রষ্টার আশীর্বাদপুষ্ট বরকত ও রহমতময় একটি সাজানো সংসার এবং তৎসংশ্লিষ্ট বহু পরিবার-পরিজন। নষ্ট করে দিয়েছে সাফল্য ও প্রতিভার অজস্র স্বাক্ষরে গড়ে ওঠা ৩ সন্তানের সম্ভাবনাময় জীবন; ধ্বংসের মুখে ঠেলে দিয়েছে সমাজ বিনির্মাণে বহুমুখী উদাহরণ-অবদান রাখা এবং দেশ উন্নয়নের বিভিন্ন মডেল ও আইডিয়া প্রণয়নকারী স্বামীর সাফল্যমন্ডিত জীবন।

স্বামীর পৃষ্ঠপোষকতায়

মাথার উপর উঠে স্বামীকেই চপেটাঘাত

এক সামান্য পত্রিকা বিক্রেতার কাছে আজীবন কৃতজ্ঞ হয়ে সবার জন্য অনুকরণীয় মহানুভবতার পরিচয় দিয়েছেন বিশ্বশীর্ষ ধনী ব্যক্তি বিল গেটস। অথচ আমাদের উচ্চশিক্ষিত কিছু নারী, যারা স্বামীর অবারিত পৃষ্ঠপোষকতায় বড় হয়ে, ক্ষমতাবান হয়ে কীভাবে সেই ক্ষমতা দিয়েই স্বামীকে চপেটাঘাত মারে, তার একটি বাস্তব উদাহরণ এখানে তুলে ধরছি।

বর্তমান সমাজের সাকিব নামের ছোট্ট এক শিশুর বাবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের কয়েক বছর পর প্ররোচিত হন দূষিত এক নারীর দ্বারা; যার কিশোরী বয়সেই প্রথম বিবাহে তার স্বৈরিণী স্বভাবে বেসামাল হয়ে ওঠে। একদিকে মানসিক ও শারীরিক মেলামেশার সেই ঘনিষ্ঠ সম্পর্কের সুদীর্ঘ দিনের বন্ধন থেকে বিদায়ের কিংবা অনুমতির কোনো তোয়াক্কা নেই, অন্যদিকে সামান্য ফোনালাপের পরিচয়েই ঠিকানা নিয়ে এক সকালে বিনা-নোটিশে চলে যায় বর্তমান সাকিবের বাবার ঐ সময়ের ব্যাচেলর বাসায়। শাড়ি-টিপ পরা আচমকা আগন্তুক সেই অতিথি তার দেহ—সৌষ্ঠবের প্রলোভনে ফেলে দেয় সরলমনা যুবকটিকে; কুমন্ত্রণার সবকিছু করে নিমিষেই বাজিমাত করে ফেলে। এভাবে অল্প ক’দিনের যাতায়াতের মধ্যেই গোপন বিয়ের জন্য ক্রেইজী চাপ দিতে থাকে এবং তারপর জরুরি বাচ্চা নিতে যা যা করার তাই তাই করে। এসবই করেছে সে তার সতীত্ব হারাবার অতীত কলঙ্ক চাপা দেয়ার উদ্দেশ্যে।

কিশোরী-তরুণী বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের হলে-হোস্টেলে, ব্যাচেলর কোয়ার্টারে এবং যুবালয়ে গিয়ে গিয়ে তার চরিত্র হারানোর কথা তারই মুখে জেনে-শুনেও বিয়ে করার জন্য তার ক্রেইজী আহ্বানে রাজি হয়ে যায় সাকিবের সরলমনা বাবা। মানুষের ভুলত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার বিশেষত তার নিজের প্রতি স্বেচ্ছা সমর্পিত স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেয়ার ক্ষেত্রে ধর্মপ্রাণ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গীর স্বামী তার প্রিয় রাসুলের অনুসারী হয়ে পরিচয় দেন মহানুভবতার।

কিশোরী-তরুণী বয়সে ঢাকা মেডিকেল কলেজের ছাত্রদের হলে-হোস্টেলে, ব্যাচেলর কোয়ার্টারে এবং যুবালয়ে গিয়ে গিয়ে তার চরিত্র হারানোর কথা তারই মুখে জেনে-শুনেও বিয়ে করার জন্য তার ক্রেইজী আহ্বানে রাজি হয়ে যায় সাকিবের সরলমনা বাবা। মানুষের ভুলত্রুটিকে ক্ষমাসুন্দর দৃষ্টিতে দেখার বিশেষত তার নিজের প্রতি স্বেচ্ছা সমর্পিত স্ত্রীকে ক্ষমা করে দেয়ার ক্ষেত্রে ধর্মপ্রাণ ও উদার দৃষ্টিভঙ্গীর স্বামী তার প্রিয় রাসুলের অনুসারী হয়ে পরিচয় দেন মহানুভবতার। তদুপরি স্ত্রীর এহেন অতীত চরিত্রের ধরণ বিবেচনায় না এনে তাকে পাশ্চাত্যের উন্মুক্ত-স্বাধীন শিক্ষাঙ্গনে পাঠিয়ে নারী-শিক্ষায় দীক্ষিত করতে সাকিবের বাবা তার উদার মনের সুবিশাল পরিকল্পনা গ্রহণ করেন। স্ত্রীর আপন বড় বোন ও দুলাভাইয়ের নিষেধ সত্ত্বেও তাকে বিলেতে পড়তে সব আয়োজন করে দেন।

কোলের শিশু-কন্যাকে নিজের কাছে রেখে স্ত্রীকে বিলেতের মুক্ত মেলামেশার সমাজে পড়াশোনার জন্য পাঠান এবং ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে তুলে দিতে গিয়ে স্ত্রীর ব্যক্তি—স্বাধীনতার পথ শাণিত করতে তাকে বলে দেন

তারপর আবারো দুই শিশু ছেলে ও মেয়েকে একত্রে নিজের কাঁধে নিয়ে তাদের মাকে পিএইচডি করতে দীর্ঘদিনের জন্য হল্যান্ড পাঠান এবং তৎপরবর্তীতে দেশে এসেও মিডিয়া ব্যক্তিত্বে পরিণত হতে মধ্যরাত অবধি টকশো করার অনুমতি দিয়ে স্ত্রীকে করে তোলেন অবারিত ক্ষমতাবান।

এভাবে সাকিবের বাবা নিজের প্রোজ্জল কর্মযৌবনের সুবর্ণ ক্যারিয়ার বিনির্মাণ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয় জীবনেই নিজের প্রতিষ্ঠিত অফিস পরিচালনার অর্থকরী সময়গুলো স্ত্রীর উচ্চতর ডিগ্রি ও সুউন্নত-শীর্ষ ক্যারিয়ারের পেছনে বিনিয়োগ করে একমাত্র মেয়ে ও বড় ছেলেকে নিজের কোলে অবিরাম আগলে রেখে স্ত্রীকে সংসারের পিছুটান থেকে মুক্তি দিয়ে তাকে কেবলই অবিরত সম্মুখে যেতে দেন এবং ক্ষমতায় ও বিত্তবৈভবে নিজের মাথার উপরেও উঠান।

স্ত্রীকে যে মাথার উপর উঠাতে নেই, ধর্মের ও দার্শনিকদের এ কথা সাকিবের বাবার জানা থাকলেও তিনি তার স্ত্রীর ক্ষেত্রে নিজ দায়িত্বের সততা ও মহানুভবতাবশে তা চিন্তায়ও আনেননি। স্ত্রীর প্রতি এরূপ অগাধ বিশ্বাসই তার কাল হয়ে দাঁড়ায়। পরবর্তীতে এই স্ত্রীই বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বোচ্চ ডিগ্রিধারী ও সুউচ্চ ক্যারিয়ারের প্রতাপশালী নারী হয়ে যখন মধ্যরাত অবদি টকশোতে বিভোর হয়ে বিভিন্ন পুরুষের সঙ্গে ব্যতিব্যস্ত, তখনই ইবলিশের প্রতিরূপে ঐ পৃষ্ঠপোষক স্বামীর ওপরই তার ইবলিশি খড়গ বসিয়ে দেয়। তার স্বামীর শ্রম-সময়-অর্থ এবং শারীরিক-মানসিক-কায়িক সর্বশক্তি বিনিয়োগের সেই মেয়ে ও ছেলেকে নিয়েই তাদের বাবা-বিরোধী কর্মকান্ডের গোপন বৈঠক ও কু-পরামর্শ করে এবং তার ঐ কু-মতলব বাস্তবায়ন করে ফেলে।

বইয়ের জ্ঞান, বোর্ড-বিশ্ববিদ্যালয়ের ডিগ্রি -এসবে এদের অহংকার আর গৌরব বাড়ায় এবং ডিগ্রি যত বড় ও উচ্চতর হয়, ক্ষমতার অহংকার আর লাম্পট্যের দাপট তত বাড়ে। কিন্তু এদের প্রকৃত মান-হুঁশ হবার যে দীক্ষা কিংবা মানবিক গুণাবলির একাডেমিক শিক্ষা, তা কখনোই তাদের কিশোরী বয়সের অসৎ চরিত্রের বুহ্য ভেদ করতে পারে না। অর্থাৎ শিক্ষা-দীক্ষা, সেমিনার-সিম্পোজিয়া এদের কুচরিত্রে পরিবর্তন আনতে পারে না; কিছুতেই হনন করতে পারে না এদের অন্ধ-আত্মকেন্দ্রিকতা, লোভ-লালসা, অহং ও অমনুষ্যচিত স্বার্থপরতা। এদের জন্য একটি প্রচলিত প্রবাদ আছে-

খাসলত যায় না ধুইলে

ইজ্জত হয় না মইলে

তাইতো যে স্ত্রীর শিক্ষা-ডিগ্রি-ক্যারিয়ার-ক্ষমতা-শক্তি ও অহংকার বৃদ্ধিতে যে স্বামী এতরকমের সহযোগিতা ও পৃষ্ঠপোষকতার অবদান রেখেছেন; যে স্ত্রী তার পূর্ব প্রেমিক-স্বামীর সাথে চরম সংকটে আশ্রয় প্রার্থনা করলে যে স্বামী মানবিক উদারতায় তাকে গ্রহণ করেন; স্রষ্টার দানে ২৪ বছরে তাদের সুস্থ ২ ছেলে ও ১ মেয়ে বড় হবার পর এবং স্বামীর পৃষ্ঠপোষকতায় ক্ষমতাবান ও শৌর্যবান হবার পর সেই স্ত্রীই বিনা কারণে কিংবা তুচ্ছ কারণে তার ৫০ বছর বয়সে ৬০ বছরের স্বামীকে ডিভোর্স দিয়ে ঐ পৃষ্ঠপোষক স্বামীকে ঘরহীন করে উদ্বাস্তু করে ছেড়ে দিয়েছে।

সাকিবের বাবার জীবনালেখ্য হতে জানা যায়, শিশু-ছোটবেলা থেকেই কর্মযোগীর কঠিন সাধনায় এবং সত্য ও সুন্দরের নিরন্তর চর্চায় বড় হওয়া বিশুদ্ধ মননের নিষ্পাপ এ মানুষটি এভাবেই দূষিত স্ত্রীর ব্যভিচারে পড়ে শেষ হয়ে গেছে। সাথে সাথে শেষ হয়ে গেছে সাকিবের বাবার বিপুল সম্ভাবনাময় শখ-সাধনার ও জ্ঞান-গরিমার আলোকিত জীবন।

যে স্ত্রীকে তার বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের সেকেন্ড ইয়ারে, তথা তার যৌবনকালীন সময়ে পূর্ব প্রেমিক-স্বামী হারানোর ক্রাইসিসে যে ভালোবাসার মন ও প্রাচুর্যতা দিয়ে তার উঠতি বয়সের ক্রাইসিস মোকাবেলায় যথেষ্ট সক্ষমতা দান করেছিলো; তারপর স্ত্রীর জীবনের উন্নতির টার্নিং পয়েন্টগুলোতে স্বামী যে উৎসর্গ ও পৃষ্ঠপোষকতা দিয়েছিলো -সেগুলোর প্রতিদান ঐ ছলনাময়ী-বহুরূপী স্ত্রী কি ইহকাল বা পরকালের কোনো কালেও দিতে পারবে!

অধিকন্তু স্ত্রীর আপন বড় বোন ও দুলাভাইয়ের বাধার মুখে যে স্বামী তাকে বিলেতে উচ্চতর পড়াশোনায় পাঠিয়েছে; দু’সন্তানকে নিজের কাছে রেখে তার ডক্টর হবার শিক্ষা ও শৌর্যে যে প্রেরণা যুগিয়েছে, কিংবা পরবর্তিতে সংসার-ঝামেলা নিজ কাঁধে বহন করে স্ত্রীর পেশাগত উন্নতি ও আজকের ক্ষমতায় অবতীর্ণে যেসব সেক্রিফাইস করেছে, তা ঐ অকৃতজ্ঞ স্ত্রী কোনোরূপ প্রতিদানে কি পূরণ করতে পারবে? হয়তবা পারতো, আল্লাহ না চাহেতো স্বামীর বার্ধক্যের অক্ষমতায় তার কোনোরূপ ভালোবাসা দিয়ে যদি...। তাই স্বামীর জীবন-যৌবন-পেশা, সকল রকম সক্ষমতা সবই কি ঐ তাকেই দিয়ে গেলো-

যে এতই অমানবিক অমানুষ,

চরিত্রহীনা এক আশ্চর্য ফানুস?

এরূপ উচ্চশিক্ষিত নারীর আত্মঅহংকার ও ক্ষমতার দাপটে পরিবার ভেঙ্গে দেবার অন্যায়ের প্রতিকারে বিশেষ ব্যবস্থা বিশেষত বিশেষ বিচারিক আদালত পরিচালনার বিষয়টি সদাশয় সরকারের বিবেচনায় আসা উচিত।

সবশেষে...

একসময় নারী জাতি ছিল সমাজে চরম অবহেলিত। মহানবী (সাঃ) নারীদের শিক্ষার অধিকার দিয়ে সমাজে তাদেরকে পুরুষের সমমর্যাদাসম্পন্ন অবস্থানে নিয়ে আসেন। তিনি ইরশাদ করেন- জ্ঞানার্জন করা প্রত্যেক মুসলিম নর-নারীর ওপর ফরজ। এ হাদীসে স্পষ্ট যে- ইসলাম নারী শিক্ষার বিরোধী নয়; বরং ইসলামই নারী শিক্ষার প্রবর্তন করেছে। সভ্যতার সূচনা থেকে প্রত্যেক যুগে নারীরা কাব্য, সাহিত্য, সংস্কৃতি, রাজনীতি, অর্থনীতি, চিকিৎসা, বিজ্ঞান, সমাজসেবা সকল ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব অবদান রেখে আসছে। তাইতো আমরা যুগে যুগে পেয়েছি ফ্লোরেন্স নাইটিংগেল, ওয়াঙ্গারী মাথাই, ভ্যালেন্তিনা তেরেসকোভা, মাদার তেরেসা, মেরি ক্যুরি, মার্গারেট থ্যাচার, সুলতানা রাজিয়া, ইন্দিরা গান্ধী, শেখ হাসিনা, এঞ্জেলা মার্কেল, শিরীন শারমিন চৌধুরীসহ আরও ক-ত্ত-জ-ন। এঁদের কেউই স্বামী বা সন্তান ফেলে, নিজ পরিবারকে ছোট করে বা ত্যাগ করে ইতিহাস রচনা করেননি। বরং এঁদের অনেকেরই ব্যক্তিগত পরিবারের পাশাপাশি ছিল বিশাল সামাজিক পরিবার এমনকি ক্ষেত্রবিশেষে রাষ্ট্রীয় পরিবারও। তাই নারী শিক্ষাকে উড়নচন্ডীতা বা ধ্বংসের উপজীব্য না করে বরং সৃষ্টির উপজীব্য করাই হোক আধুনিক ডিজিটাল যুগের সেস্নাগান। স্বামী ত্যাগ বা পরিবার ভাঙন নয়, বরং স্বামীর কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে পরিবার গঠন ও পালনেই বৃদ্ধি পাক নারীর মর্যাদা। যেমনটি বলে গিয়েছেন বিদ্রোহী কবি-

বিশ্বে যা কিছু মহান সৃষ্টি, চির কল্যাণকর

অর্ধেক তার করিয়াছে নারী, অর্ধেক তার নর।



লেখকঃ

বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাস পত্রিকার সম্পাদক

ফোনঃ ০২—৪৭১২২৪৬৩, ৯৫১৫০৯৯

web: www.helal.net.bd

e-mail: m7helal@yahoo.com